গডফাদাররা আত্মসমর্পণে, ইয়াবা চালানের নেপথ্যে কারা?

বার্তা ২৪ ◑

প্রায় দুই বছর আগে সারাদেশের মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুরুতেই র‍্যাবের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটতে থাকে। র‍্যাবের এই যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে পরে যোগ দেয় পুলিশও। ইয়াবা সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালরা একের পর এক নিহত হতে থাকে। উন্মোচন হতে থাকে ইয়াবা চালানের সিন্ডিকেট।

তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। তবুও থেমে নেই ইয়াবা ব্যবসা। কমেনি মাদকদ্রব্যের সেবন ও কেনাবেচা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাবে, গত দুই বছরে মাদকের উদ্ধার, গ্রেফতার ও মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির পেয়েছে। এমনকি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে আসা রোগীর সংখ্যাও বিগত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল।

এদিকে দেশে ইয়াবা প্রবেশের প্রধান পথ হলো কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। গত সপ্তাহে কক্সবাজারের টেকনাফ সরকারি কলেজ মাঠে পুলিশের কাছে শীর্ষস্থানীয় ২১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, আত্মসমর্পণ করা ১২৩ ইয়াবা ব্যবসায়ীই ছিল বিভিন্ন পর্যায়ের গডফাদার। তাদের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তও ছিল।

এত কিছুর পরও ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টানতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এখন প্রশ্ন উঠছে, গডফাদাররা যদি আত্মসমর্পণ করে তাহলে ইয়াবা আনছে কারা। আর কারাই বা এর নেপথ্যে কাজ করছে?

তথ্য বলছে, ইয়াবাসহ মাদক পাচারকারী এখন কৌশল পাল্টিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইদানিং নারীদের মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারীদের এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা ধরা পড়ছেন, তারা শুধু বহনকারী মাত্র। নেপথ্যে থাকছে নতুন তৈরি হওয়া ছোট ছোট ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তারাই কাঁচা টাকার লোভে লাখ লাখ পিস ইয়াবা চালান করছে। দিনে দিনে হয়ে এসব ব্যবসায়ীরা পরিণত হচ্ছে ইয়াবা গডফাদারে।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইয়াবার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত ৩ কোটির বেশি সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। আর সারাদেশে আটক হয়েছে ২ লাখ ইয়াবা ব্যবসায়ী। যাদের মধ্যে রাঘব বোয়াল থাকলেও বেশি ছিল চুনোপুঁটি।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মাদক নির্মূল হোক এবং সে লক্ষ্যে তারা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কে ছোট ব্যবসায়ী, কে বড় ব্যবসায়ী-তা আমরা দেখছি না। যারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন- তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

একই বিষয়ে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাসেম বলেন, সমাজে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা বিক্রি বন্ধ করতে হলে এর চাহিদা আগে বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। র‍্যাবের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সবাই ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা না যাবে-ততক্ষণ পর্যন্ত ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টানা কঠিন হবে।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, পুলিশের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের সার্বিক মাদক নির্মূল পরিস্থিতির ‘বেশ উন্নতি’ হয়েছে। মাদকের বিস্তার কমেছে, জনসচেতনতা বেড়েছে।